আজ ইতিহাসের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী
প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২১ আগস্ট ২০২১
ছবি-সংগৃহীত
আজ রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম ভয়াল হত্যাযজ্ঞ, নারকীয় সন্ত্রাসী এবং ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এদিনে রাজধানী বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে চালানো হয় নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা। গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হিংসার দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে।
স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্ত-চিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য দেখা যায়।
সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করায় ভাগ্যগুণে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তার গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি ভেদ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন।
পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে বীর মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্পিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরো কয়েকজন পরাজিত হন।
গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ও ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানী ঢাকাকে। এ গণহত্যার উত্তেজনা ও শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ার শেল চার্জ করে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।
পরবর্তী সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। রায়ে এটি প্রমাণ হয়, ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল।
বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনচিত্তে ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী পালন করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহিদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০ টায় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করতে সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।
বঙ্গবাণীডটকম/এমএস
- সারাদেশে সাতদিন লকডাউন
- ইউএনও ওয়াহিদা ওএসডি, স্বামী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব
- গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত বঙ্গবন্ধু
- টিকা ছাড়া বের হলে শাস্তির খবর ঠিক নয়
- বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ স্ত্রীর ‘নির্যাতনের শিকার’
- মহান বিজয় দিবস আজ
- গণপরিবহন ও বিনোদন কেন্দ্রর বিষয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন
- ২০২১ সালের ছুটির তালিকা প্রকাশ
- ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মারা গেছেন
- আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
- পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইনে ত্রুটি
- ১১ দফা দাবিতে সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের নৌ-ধর্মঘট
- সোমবার থেকে সব গণপরিবহন বন্ধ
- একদিনে ২২ জনের মৃত্যু
- আল্লামা আহমদ শফী মারা গেছেন